সুস্থ গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যেখানে জনগণ ভয়ডরহীনহীনভাবে নির্বাচন করতে পারে তাদের প্রতিনিধি। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি গভীর হয়। কেননা ভোট মানেই জনগণের মতপ্রকাশ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেওয়া।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সেই নির্বাচন নিয়েই থেকে যায় সন্দেহ, যদি নির্ভয়ে ভোটার কেন্দ্রে যেতে না পারে, যদি ব্যালট বাক্স ভর্তি হয়ে যায় আগেই, তাহলে কি সেটা আদৌ নির্বাচন? হ্যাঁ সেটি নির্বাচন, তবে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন নয়।সুষ্টু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রসঙ্গ যখনই আসে তখনি সেনাবাহিনী হয়ে ওঠে নির্ভরতার প্রতীক।
নির্বাচন ইস্যুতে সেনাবাহিনীর বক্তব্যও যেন স্পষ্ট, নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা আসলেই সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করতে। এই প্রসঙ্গে সেনাসদরের সামরিক অপারেশন পরিদপ্তর জানিয়েছে,
“নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা আসলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত।”
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে সেনাবাহিনী না থাকলে কেমন প্রভাব পড়বে নির্বাচনে? উত্তর খুজতে একটু পেছনে ফেরা যাক।বাংলাদেশে বিগত দেড় যুগে দেখা গেছে, একের পর এক জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে রাখা হয়েছিল কোণঠাসা করে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে তৎকালীন সরকার ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ RPO-তে সংশোধনী এনে সেনাবাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা থেকেই বাদ দেয়। অর্থাৎ, নির্বাচনে একজন আনসার সদস্যের যে ক্ষমতা ছিল, একজন সেনা সদস্যেরও যেন তা ছিল না। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করলেও সেনাবাহিনীকে তখন রাখা হয় নিস্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকায়।
এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, আগেই ব্যালট ভর্তি, বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি এসব অভিযোগে ছিল ছড়াছড়ি। আর তখন সেনাবাহিনী ছিল রিজার্ভ অবস্থায়, কাজেই মাঠে কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনি তারা। তবে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন তিনি চান স্বচ্ছ নির্বাচন।
প্রধান উপদেষ্টা যদি এমন অবাধ ও সুষ্টু নির্বাচন চান তবে প্রয়োজন সেনাবাহিনীর সাহায্য।কারণ তারা নিরপেক্ষ। তাদের সামনে দল, মত, রং,কোনো কিছুই বিবেচ্য নয়। তারা বোঝে আইনের ভাষা, পালন করে সাংবিধানিক দায়িত্ব। এজন্য সেনাবাহিনীর উপস্থিতি মানেই বাড়বে ভোটারদের আত্মবিশ্বাস। কিন্তু যদি ঘটে এর ব্যতিক্রম অর্থাৎ উপস্থিতি না থাকে সেনাবাহিনীর, তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি – নির্বাচনে আস্থা হারাবে সাধারণ জনগণ। কেন্দ্র দখল কিংবা ভোট জালিয়াতির সময় প্রশাসন চুপ থাকলে ভোটাররা হবে নিরুপায়।
আর যদি সেনাবাহিনী থাকে সক্রিয় তাহলে ২০০১ কিংবা ২০০৮ সালের মতো নির্বাচন আশা করাই যায়।যেখানে ভোটার যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে, বিরোধীরা থাকে মাঠে, ফলাফল মেনে নেয় সবাই। কারণ, সেনাবাহিনী মাঠে মানেই তৈরি হয় একটা নিরাপত্তার বলয়।
এখন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বলছে, সেনাবাহিনীকে আবারও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংজ্ঞায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচন কমিশনও, RPO সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদে।সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে তারাও প্রস্তুত নিরপেক্ষ নির্বাচনের সহায়ক হতে।তাই এখন প্রশ্ন নয় বরং সময়ের দাবি, একটি গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সেনাবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করা। যা ভোটারদের যোগাবে সাহস, নির্বাচনকে করবে গ্রহনযোগ্য।

Leave a Reply